নিশ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ: আপনি যদি অনলাইনে একটি ব্যবসা শুরু করতে চান বা একটি সফল ব্লগ তৈরি করতে চান, তবে সবার আগে আপনাকে একটি নিশ নির্বাচন করতেই হবে। কারণ এই নিশটিই হলো আপনার অনলাইন জগতের মূল পরিচয়। আপনার ওয়েবসাইটের বিষয়বস্তু কী হবে, আপনি কোন ধরনের ভিজিটরদের টার্গেট করবেন এবং মার্কেটিং কৌশল কেমন হবে এই সবকিছুই নিশ নির্বাচন করার ওপর নির্ভর করে।
কিন্তু সঠিক নিশকীভাবে নির্বাচন করা যায়, তা অনেকের কাছেই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আর ঠিক এই কারণেই, আজকের আর্টিকেলে আমরা নিশ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব এবং আপনাকে সঠিক নিশ বা বিষয়বস্তু বেছে নিতে সাহায্য করব। তাহলে, চলুন সরাসরি মূল আলোচনায় ফিরে যাওয়া যাক!
নিশ (Niche) কি?
একটি নিশ হলো একটি নির্দিষ্ট বিষয় বা ক্ষেত্র, যেখানে আপনি আপনার সমস্ত মনোযোগ ও দক্ষতা কেন্দ্রীভূত করবেন। এটি এমন একটি বিষয়, যার উপর আপনি গভীরভাবে জানবেন এবং যার সম্পর্কে আপনার অনেক কিছু বলার থাকবে। এই নিশ থেকেই আপনার ব্লগের ভিজিটরদের নতুন নতুন ধারণা দিতে পারবেন।
উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি ফ্যাশন সম্পর্কে খুবই আগ্রহী হন বিভিন্ন ট্রেন্ড জানেন, আইটেম পরীক্ষা করেন এবং আপনার নিজস্ব ধারণা থাকে তবে এই ফ্যাশনই হতে পারে আপনার সম্ভাব্য নিশ, যার উপর ভিত্তি করে আপনি আপনার ব্লগ শুরু করতে পারেন।
নিশ কত প্রকার ও কি কি
আমরা যত ধরনের নিশ (Niche) দেখি, সেগুলোকে প্রধানত দুটি (০২) ভাগে ভাগ করা যায়। তবে, নিশ সম্পর্কে যদি ভালোভাবে সম্পূর্ণ ধারণা দিতে হয়, তাহলে সেগুলোকে সাধারণত তিনটি (০৩) ভাগে ভাগ করা দরকার। যেমন –
- ব্রড নিস
- মাইক্রো নিস
- নির্দিষ্ট নিস
১. ব্রড নিস কি
ব্রড নিশ (Broad Niche) হলো নিশ-এর প্রধান একটি ভাগ। এই ধরনের নিশগুলোকে ছোট ছোট অনেকগুলো নিশে বিভক্ত করা যায়। সাধারণত, অনেকগুলো ছোট ছোট নিশের সমন্বয়ে যে নিশ গঠিত হয়, তাকেই ব্রড নিশ হিসেবে ধরা হয়।
সহজভাবে বললে ধরুন, আপনার একটি নিশ হলো ইন্টারনেট রিলেটেড। এখন ইন্টারনেট টপিক-এর উপর আরো অনেক ছোট ছোট টপিক আছে, যেমন ইন্টারনেট থেকে আয় করা বা ইন্টারনেট টুলস ইত্যাদি। আপনি এই ছোট ছোট টপিকগুলো নিয়েও কাজ করতে পারেন, যা একটি ব্রড নিশ-এর অংশ।
মূলত, আপনি যদি দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে চান, তবে আপনাকে ব্রড নিশ (Broad Niche) সিলেক্ট করে কাজ করতে হবে।কারণ, এখানে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ক্যাটাগরির টপিক পাওয়া যায়। ব্রড নিশগুলোর মধ্যে অনেকগুলো মাইক্রো নিশের বিষয় থাকে, যেগুলোকে আবার ভাগ করে ছোট নিশ তৈরি করা যায়।
উদাহরণস্বরূপ:
- ব্রড নিশ > টেকনোলজি
- টেকনোলজি > মোবাইল
- মোবাইল > মোবাইল টিপস
- মোবাইল টিপস > মোবাইল সফটওয়্যার
ঠিক এরকমভাবেই ব্রড নিশগুলো অনেক টপিকের মধ্যে হয়ে থাকে।
২. মাইক্রো নিশ কি
মাইক্রো নিশ হলো ব্রড নিশের ঠিক বিপরীত। এই ক্ষেত্রে, যেকোনো বড় টপিকের খুবই ছোট ছোট অংশগুলো নিয়ে কাজ করা হয়। যেমন ধরুন – আপনার ওয়েবসাইটের মূল ক্যাটাগরি হলো ‘শিক্ষা’। এটি একটি ব্রড নিশ। কিন্তু আপনি যদি কেবল অনার্সের সাজেশন দেওয়া নিয়ে কাজ করেন, তবে এই ছোট টপিকের উপর ফোকাস করাই হলো মাইক্রো নিশ।
৩. নির্দিষ্ট নিশ কি
এগুলো যে কোনো একটি নির্দিষ্ট টপিকের ওপরেই ফোকাস করে। সেখানে কেবল সেই টপিকটি ছাড়া অন্য কোনো বিষয় থাকে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় – কম্পিউটার। এই ক্ষেত্রে, ওয়েবসাইটে শুধুমাত্র কম্পিউটার সংক্রান্ত আর্টিকেল বা যাবতীয় তথ্যই থাকবে। সেখানে মোবাইল বা অন্য কিছুর কোনো তথ্যই দেওয়া হবে না।
নিশ কেন গুরুত্বপূর্ণ
মনে করুন, আপনি একজন শেফ। আপনি সব ধরনের খাবার রান্না করতে পারেন। কিন্তু যদি আপনি একইসাথে সব ধরনের খাবারের রেসিপি শেয়ার করার চেষ্টা করেন, তাহলে দর্শকরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়বেন এবং আপনার খাবারের মধ্যে কোনটা সেরা, তা তারা বুঝতে পারবেন না।
ঠিক একইভাবে, একটি ব্লগের ক্ষেত্রেও নিশ বা বিষয় নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি নির্দিষ্ট নিশ নির্বাচন করে আপনি আপনার ব্লগকে একটি সুনির্দিষ্ট দিকে নিয়ে যেতে পারবেন, যা আপনার ভিজিটরদের কাছে অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে সহায়তা করবে।
কেননা, ব্লগিং সেক্টরে নিশের ভূমিকা অপরিসীম, আর তার কারণগুলো নিচে দেওয়া হলো।
০১-অডিয়্যান্স যাচাই করা
নিশ নির্বাচনের মাধ্যমে আপনি নির্দিষ্ট ধরনের ভিজিটরদের টার্গেট করতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার নিশ হয় “বেবি কেয়ার”, তাহলে আপনি নতুন মা-দের কাছে সহজে পৌঁছাতে পারবেন।
এছাড়াও, সার্চ ইঞ্জিনগুলো আমাদের ব্লগকে নির্দিষ্ট নিশের ভিত্তিতে র্যাঙ্ক করে থাকে। সুতরাং, যদি আপনার নিশ সঠিকভাবে নির্বাচিত হয়, তাহলে আপনার ব্লগ সার্চ ইঞ্জিনের ফলাফলে টপ পজিশনে থাকবে।
০২-ব্রান্ডিং করার সুবিধা
আপনার ব্লগের সুস্পষ্ট ব্র্যান্ড আইডেন্টিটি থাকলে আপনি সঠিক পাঠকদের আকর্ষণ করতে পারবেন। যেমন, আপনার ব্লগ যদি ফ্যাশন সম্পর্কে হয়, তাহলে ফ্যাশনপ্রেমীরা আপনার ব্লগে আসবে। কারণ, সুসংগঠিত ব্র্যান্ড পাঠকদের মনে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায়।
০৩-সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন (SEO)
নির্দিষ্ট নিশ নির্বাচন করে আপনি সার্চ ইঞ্জিনে আপনার ব্লগকে সহজে র্যাঙ্ক করতে পারবেন। যখন আপনি নির্দিষ্ট কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে লেখালেখি করবেন, তখন সার্চ ইঞ্জিনগুলো আপনার ব্লগকে সেই কি-ওয়ার্ডের সাথে সম্পর্কিত সার্চ রেজাল্টে দেখাবে।
০৪-সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
আপনি যদি একজন ব্লগার হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি অবশ্যই চাইবেন আপনার ব্লগটি যেন আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছায়। এই লক্ষ্যে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং একটি কার্যকরী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। আর এই হাতিয়ারকে আপনি তখনই কাজে লাগাতে পারবেন, যখন আপনার নির্দিষ্ট একটি নিশ সিলেক্ট করা হবে।
০৫-ব্লগিং থেকে আয়ের উৎস
একটি নির্দিষ্ট নিশ নির্বাচন করলে আপনি আপনার ব্লগ থেকে আয় করার বিভিন্ন পথ খুঁজে নিতে পারবেন। উদাহরণস্বরূপ, আপনার নিশ যদি “ফ্যাশন” হয়, তবে আপনি ফ্যাশন সম্পর্কিত পণ্য বিক্রি করতে পারবেন, অথবা বিভিন্ন ফ্যাশন ব্র্যান্ডের সাথে পার্টনারশিপ করতে পারবেন।
আবার, আপনি যদি প্রোডাক্ট রিভিউ নিশ নিয়ে কাজ করেন, তাহলে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের পণ্যের রিভিউ দেওয়ার জন্য আপনাকে অফার করবে। নিশের গুরুত্ব আপনারা হয়তো ইতিমধ্যেই আন্দাজ করতে পেরেছেন। ব্লগিংয়ে সফল হতে হলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য রাখতে হয়, যার মধ্যে অন্যতম হলো ‘কিওয়ার্ড’ এবং ‘কম্পিটিটর’।
যদি এমন কোনো নিশ বেছে নেন, যার প্রতিযোগী অনেক বেশি, তবে সেখানে সফল হতে আপনাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে এবং ধৈর্য ধরে কাজ করে যেতে হবে। কারণ এখানে শুধু আর্টিকেল লিখে পোস্ট করাই মূল বিষয় নয়, আপনাকে প্রতিযোগীদের পিছনে ফেলে আপনার কনটেন্টকে সবার প্রথমে র্যাংকিং করাতে হবে।
আবার আপনাকে এটাও মনে রাখতে হবে যে, আপনি যে নিশটি বাছাই করেছেন, সেখানে কিওয়ার্ড কেমন আছে। যদি আপনি এমন একটি মাইক্রো নিশ নির্বাচন করেন যেখানে মাত্র ৫০-৬০টির বেশি টপিক নেই, তাহলে সেখানে ভালো কোনো কিওয়ার্ড নিয়ে কাজ করা সম্ভব হবে না।
১৫টি সেরা ব্লগিং নিশ আইডিয়া
আপনি যদি ব্লগিং শুরু করতে চান, তবে সবার আগে আপনাকে জানতে হবে কোন নিশের চাহিদা বাজারে কেমন। কারণ, চাহিদা নেই এমন কোনো নিশ নিয়ে কাজ করলে সেখানে সফল হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় থাকেই না। তাই, আপনাদের সুবিধার জন্য নিচে সেরা ১৫ টি ব্লগিং নিশের ধারণা দেওয়া হলো –
- টেকনলজি নিশ
- শিক্ষা নিশ
- স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ
- ভ্রমণ বিষয়ক নিশ
- ফ্যাসন বা বিউটি টিপস নিশ
- গ্যাজেট রিভিউ
- অনলাইনে আয় নিশ
- ব্যবসা বানিজ্য নিশ
- সংবাদ ওয়েবসাইট
- চাকরি বা ক্যারিয়ার নিশ
- ব্যাংকিং বা ফিন্যান্স নিশ
- বিজ্ঞান নিশ
- ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিশ
- টিপস এন্ড ট্রিক্স নিশ
- প্রশ্ন ও উত্তর ওয়েবসাইট বা মাল্টিনিশ
এই ধরনের নিশগুলো নিয়ে কাজ করে আপনি খুব সহজেই অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। নিচে জনপ্রিয় কিছু ব্লগিং নিশের ধারণা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –
১. টেকনলজি নিশ
সেরা ব্লগিং নিশ নিয়ে কথা বললে, প্রথমেই টেকনলজি-র নামটি আসে। মূলত টেকনলজি একটি ব্রড নিশ। শুধুমাত্র টেকনলজিকে টার্গেট করে অনলাইনে হাজার হাজার মাইক্রো নিশ রয়েছে। দিন দিন টেকনলজি নিশের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, তাই দীর্ঘদিন ধরে কাজ করার ইচ্ছা থাকলে টেকনলজি নিয়ে কাজ করা সবচেয়ে ভালো হবে।
তবে, আপনি যদি ব্রড নিশ নিয়ে কাজ করতে না চান, তাহলে এর মধ্যে থাকা মাইক্রো নিশ নিয়ে কাজ করতে পারেন। বিশেষ করে কম্পিউটার, মোবাইল ইত্যাদি নিশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
২. শিক্ষা নিশ
ব্লগিং-এর মধ্যে শিক্ষা নিশ হলো সবচেয়ে সেরা একটি নিশ। বিশেষ করে, বর্তমান সময়ে প্রায় সকল শিক্ষার্থীই অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণের দিকে ঝুঁকছে। তারা বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন, উত্তর, সাজেশন ইত্যাদি এখন অনলাইনের মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি খুঁজে থাকে।
এছাড়াও, শিক্ষার্থীরা অ্যাসাইনমেন্টের ক্ষেত্রেও অনলাইনে গুগল সার্চের মাধ্যমে অনেক বেশি সাহায্য নেয়। শিক্ষা ক্ষেত্রের এই নিশ কখনও শেষ হবে না, তাই আপনি এটা নিয়ে নিশ্চিন্তে সারাজীবন কাজ করতে পারবেন।
৩. স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ
যদি আপনি মেডিকেল বা মানুষের স্বাস্থ্য সুস্থতার বিভিন্ন টপিক কভার করতে পারেন, তাহলে স্বাস্থ্য রিলেটেড নিশ সবচেয়ে ভালো হবে। এই নিশে আপনি বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং শারীরিক সুস্থতার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে লেখালেখি করতে পারেন।
৪. ভ্রমণ বিষয়ক নিশ
ট্র্যাভেল করতে সবাই পছন্দ করে। মানুষ যখন কোনো অচেনা স্থানে ভ্রমণে বের হয়, তখন গুগল-এর মাধ্যমে সেখানে থাকা বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় সম্পর্কে জেনে নেয়। আপনি চাইলে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের বিভিন্ন বিষয় আপনার ব্লগে তুলে ধরতে পারেন।
৫. ফ্যাশন বা বিউটি টিপস নিশ
ব্লগিং নিশের ক্ষেত্রে ফ্যাশনকে বেছে নিতে পারেন, কারণ আপনি এখানে চাইলে পরবর্তী সময়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারবেন। অনলাইনে ফ্যাশনের বিভিন্ন টিপসের অনেক চাহিদা আছে।
বিশেষ করে, অনলাইনে বেশিরভাগ মেয়েই বিভিন্ন ধরণের রূপচর্চা বিষয়ক জিনিস জানতে চায়। আপনি সেখানে বিভিন্ন ধরণের বিউটি প্রোডাক্টের রিভিউ দিতে পারবেন। ট্রেন্ডিং বিভিন্ন ফ্যাশন তুলে ধরতে পারলে অনেক বেশি ভিজিটর পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৬. গ্যাজেট রিভিউ
এটি আপনি চাইলে টেকনলজির ব্রড নিশে করতে পারেন। তবে আপনি যদি শুধু একটি টপিক নিয়ে এগিয়ে যেতে চান, তাহলে গ্যাজেট রিভিউ নিশ আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে। এখানে আপনাকে বিভিন্ন ধরনের গ্যাজেট-এর রিভিউ লিখতে হবে।
আমরা যখন কোনো নতুন গ্যাজেট ক্রয় করতে চাই, তখন অনলাইন থেকে সেটার রিভিউ, দাম ইত্যাদি বিষয়গুলো জেনে নেই। বাংলাদেশে প্রচুর চাহিদা সম্পন্ন একটা নিশ হলো গ্যাজেট রিভিউ।
৭. অনলাইনে আয় নিশ
বর্তমানে প্রায় সবাই অনলাইনে আয়ের দিকে ঝুঁকছে। বলতে গেলে, অনলাইন থেকে টাকা আয় করতে সবাই প্রায় মরিয়া। আপনি চাইলে অনলাইনে আয়ের উপরে ব্লগিং করতে পারেন। এই নিশে আপনি ফ্রিল্যান্সিং, মার্কেটপ্লেস ইত্যাদি টপিকের উপর অনেক কি-ওয়ার্ড নিয়ে কাজ করতে পারবেন।
৮. ব্যবসা বানিজ্য নিশ
ব্যবসা নিশ হলো অনেক জনপ্রিয় নিশগুলোর মধ্যে একটি। ব্যবসা নিশের মধ্যে আপনি ‘কীভাবে নতুন ব্যবসা শুরু করা যায়’, ‘কীভাবে ব্যবসা বাড়ানো যায়’, ‘বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা আইডিয়া’ ইত্যাদি নিয়ে ব্লগিং করলে দ্রুত সফল হতে পারবেন। কারণ ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়গুলো সবসময়েই সার্চ হয়ে থাকে।
৯. সংবাদ ওয়েবসাইট নিশ
এই নিশে চাহিদা অনেক এবং কন্টেন্টের অভাব হবে না কখনও। তবে, নিউজ সাইটগুলোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হলো র্যাঙ্কিং। যেহেতু ইতিমধ্যেই অনেক বড় বড় নিউজ ওয়েবসাইট আছে, তাই আপনাকে তাদের সাথে প্রতিযোগিতা (কম্পিটিশন) করতে হবে।
আপনি যদি সাংবাদিকতা বা নিউজ ফোরাম নিয়ে কাজ করতে চান, তাহলে নিউজ ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারেন। নিউজ ওয়েবসাইটের সবচেয়ে বড় একটা সুবিধা হলো এখানে কিওয়ার্ড রিসার্চ করতে হয় না।
১০. চাকরি বা ক্যারিয়ার নিশ
আমরা বিভিন্ন ধরনের চাকরির সার্কুলার অনলাইনের মাধ্যমে খুঁজে থাকি। চাকরিপ্রত্যাশীদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সার্চ হয় জব সার্কুলারে।
আপনি চাইলে বিভিন্ন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংগ্রহ করে আপনার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে পারেন। সেখানে ভিজিটরদের ধরে রাখতে আপনি বিভিন্ন ধরনের চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন সমাধান, পরীক্ষার ফলাফল ইত্যাদি নিয়ে ব্লগটি সাজাতে পারেন।
১১. ব্যাংকিং বা ফিন্যান্স নিশ
সাধারণত, অর্থ নিয়ে মানুষ সবচেয়ে বেশি সচেতন থাকে। তাদের কষ্টার্জিত টাকা কোথায়, কোন ব্যাংকে, কীভাবে জমা রাখবে ইত্যাদি বিষয়গুলো বেশিরভাগ লোকই অনলাইনে খুঁজে থাকে।
যদি আপনার বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক লোন, স্টাডি লোন ইত্যাদি বিষয়ের উপরে আগ্রহ ও জ্ঞান থাকে, তবে আপনি ব্যাংকিং বা ফিন্যান্স নিয়ে ব্লগিং শুরু করতে পারেন।
১২. বিজ্ঞান নিশ
আপনি চাইলে বিজ্ঞান নিয়ে ব্লগিং করতে পারেন। এখন পর্যন্ত বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ভিত্তিক বড় সাইটের পরিমাণ অনেক কম। আপনি যদি বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ভিত্তিক একটা ব্লগ খোলেন, তবে আপনার কম্পিটিটর থাকবে খুবই কম।
এ ধরনের ব্লগগুলোতে প্রচুর পরিমাণে সার্চ হয়ে থাকে। বিজ্ঞান সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান থাকলে আপনি বিজ্ঞান ভিত্তিক একটা বাংলা ওয়েবসাইট চালু করতে পারেন।
১৩. ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিশ
ইতিহাস নিয়ে মানুষের মনে আগ্রহ সবসময় ছিল এবং থাকবে। বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় নিশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিশ। আপনার যদি ইতিহাস নিয়ে ভালো ধারণা থাকে, তাহলে এটা নিয়ে ব্লগিং করতে পারেন। প্রচুর পরিমাণে ইতিহাস থাকায় আপনার টপিকের অভাব কখনও পোহাতে হবে না।
১৪. টিপস এন্ড ট্রিক্স নিশ
দৈনন্দিন জীবনে আমরা নানান ধরনের কাজ করে থাকি। কাজগুলোকে সহজভাবে করার জন্য আমরা উপায় খুঁজে থাকি। যেমন ধরুন, AI-এর মাধ্যমে এখন মানুষ চাইলে কোডিংও করতে পারে এটাও একটা টিপস। এরকম বিভিন্ন টুলস, সফটওয়্যার, মোবাইল ইত্যাদি বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের টিপস আপনি মানুষের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। এসব টিপসগুলো অনলাইনে বেশ জনপ্রিয়।
১৫. প্রশ্ন ও উত্তর ওয়েবসাইট বা মাল্টিনিশ
আপনি যদি গুগলে কিছু খুঁজে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই আপনি Bissoy, Quora-এর মতো ওয়েবসাইটের সাথে পরিচিত। আসলে, এখানে কোনো নির্দিষ্ট নিশ মেইন্টেন করা হয় না। এসব ওয়েবসাইট বিভিন্ন ব্রড নিশ বা প্রায় সব ধরনের নিশ নিয়ে কাজ করে।
এখানে একদল ভিজিটর বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করবে আর আরেক দল ভিজিটর সেখানে উত্তর প্রদান করবে। ফলে আপনাকে নিজে থেকে কন্টেন্ট পাবলিশ করতেও হবে না। যারা পোস্ট করবে, তারাই আবার অন্যদের উত্তর দিয়ে দেবে। এ ধরনের সাইটগুলো বর্তমানে অনেক বেশি জনপ্রিয়।
উপরের নিশগুলো ছাড়াও আপনি চাইলে নিচের আরও কয়েকটি নিশ আছে, সেগুলো নিয়ে ব্লগিং শুরু করতে পারেন–
- ইসলামিক নিশ
- ফটোগ্রাফি
- প্রানি পালন
- কৃষি কাজ
- লাইফস্টাইল
- মোটিভেসন
- পণ্যের দাম
- ইন্টারভিউ
- সফটওয়্যার রিভিউ
- গেমস রিভিউ
- ভিসা ও বিদেশ যাওয়া সংক্রান্ত
- সরকারি তথ্য সেবা সংক্রান্ত
- গুনি ব্যাক্তিদের সাক্ষাতকার
best niche selection এর জন্য কয়টি বিষয় ফলো করতে হয়
সবচেয়ে ভালো নিশ (Niche) নির্বাচন করার জন্য আপনারা সব সময় কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখবেন:
১। কিওয়ার্ড: আপনি যে নিশটি নির্বাচন করবেন, সেটির উপর পর্যাপ্ত পরিমাণে কিওয়ার্ড খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা, তা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
২। কম্পিটিটর (প্রতিযোগী): আপনার বাছাই করা নিশের উপর মোট কতগুলো সাইট গুগলের র্যাঙ্কিং-এ প্রথমে আছে, তারা কত বছর ধরে কাজ করছে এবং তাদের চেয়ে ভালো মানের কনটেন্ট আপনি দিতে পারবেন কিনা— তা যাচাই করতে হবে।
৩। কনটেন্ট তৈরির দক্ষতা: নিশ বাছাই করার সময় খেয়াল রাখবেন, আপনার যে বিষয়ে দক্ষতা আছে সেটির উপরে নিশ নির্বাচন করতে। তবে, আপনি যদি অন্যদের দিয়ে কনটেন্ট তৈরি করান, সেক্ষেত্রে যে কোনো বিষয়ের উপর নিশ সিলেক্ট করতে পারেন।
উপরে বলা বিষয়গুলোই হলো একদম প্রধান বিষয়, যেগুলোর উপরে আপনাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। সবশেষে আপনি দেখতে পারেন, কোন নিশের উপর সিপিএম (CPM) কেমন আছে, বিজ্ঞাপন থেকে আয় কেমন হয় ইত্যাদি। তবে, এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো মাথায় রেখে সঠিক ভাবে নিশ চিহ্নিত করতে পারলে আপনি দ্রুত সফল হতে পারবেন।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর (FAQs)
নিশ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ ও ১৫টি সেরা ব্লগিং নিশ আইডিয়া- এই বিষয়গুলো সম্পর্কে আশা করি আপনি পরিষ্কার ধারণা পেয়েছেন।
তবে, এরপরও আপনার মনে নিশ সম্পর্কিত আরও নানা ধরনের প্রশ্ন থাকতে পারে। আপনার সুবিধার জন্য সেগুলোর মধ্যে কিছু প্রশ্নের উত্তর নিচে দেওয়া হলো। এই উত্তরগুলো আপনার ব্লগিং জ্ঞানকে আরও মজবুত করতে সাহায্য করবে।
নিশ অর্থ কি?
“Niche” (নিশ) শব্দটি সরাসরি ফরাসি ভাষা থেকে এসেছে। তবে, এই “Niche” শব্দের বাংলা অর্থ গুগল সার্চ করলে পাওয়া যায় “একটি বিশেষ বাজার বা কুলুঙ্গি”।
নিশ সিলেকশন?
বর্তমানে অসংখ্য নিশের মধ্যে যখন আপনি নির্দিষ্ট একটি নিশকে বেছে নেবেন, তখন সেই প্রক্রিয়াটিকেই “নিশ সিলেকশন” বা “নিশ নির্বাচন” বলা হয়। আপনি যে নিশের উপরে আপনার ব্লগে কনটেন্ট বা লেখা প্রকাশ করবেন, সেটিই হলো আপনার নির্বাচিত নিশ।
নিশ মার্কেটিং কি?
নিশ মার্কেটিং হলো এক ধরনের বিশেষ কৌশল, যেখানে একটি ব্যবসা নির্দিষ্ট একটি ছোট বাজারের ওপর সম্পূর্ণ ফোকাস করে। এই বাজারটিকে সাধারণত বড় বাজারের একটি অংশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, যেখানে বিশেষ চাহিদা ও আগ্রহ সম্পন্ন গ্রাহকরা থাকেন।
ইন্টারন্যাশনাল নিস কি?
আপনি যখন দেশের গ্রাহকদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের টার্গেট করে নিশ নির্বাচন করবেন, তখন তাকে ইন্টারন্যাশনাল নিশ বলা হবে। এর ফলে, বিদেশের ভিজিটররাও আপনার ব্লগের কনটেন্ট পড়ার জন্য ভিজিট করবে।
লেখকের শেষ মতামত
প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে আমরা নিশ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? ও নিশ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেছি। আমরা আশা করি, এই আলোচনা থেকে আপনি আপনার ব্লগিং জার্নির প্রথম ধাপটি খুব সহজেই পার করতে পারবেন। এরপরও যদি আপনার মনে নিশ সম্পর্কিত আরও কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে নিচে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।